হলুদের গুণাগুণ
হলুদ বা হলদি হলো হলুদ গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক প্রকারের মশলা। ভারত , বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রান্নায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি আদা পরিবারের অন্তর্গত একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ।
হলুদ গাছের আদি উৎস দক্ষিণ এশিয়া। এটি ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে জন্মে থাকে। হলুদ গাছের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতের দরকার হয়। বছরে সাধারণত একবার হলুদ গাছের শিকড় তোলা হয়। পরের বছর পুরানো শিকড় থেকে নতুন গাছ গজায়।
হলুদ গাছের শিকড়কে কয়েক ঘণ্টা সিদ্ধ করা হয়, তার পর গরম চুলায় শুকানো হয়। এরপর এই শিকড়কে চূর্ণ করে গাঢ় হলুদ বর্ণের গুঁড়া পাওয়া যায়। এই হলুদ গুড়া দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশের খাদ্য প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়। তবে ঐতিহ্যগতভাবে এই শিকড় ভালোভাবে ধৌতকরণের পর শিল-পাটায় পানি সহযোগে বেটে নিয়ে হলুদের লেই তৈরি করা হয় যা সরাসরি রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
এবার আসুন জেনে নেই হলুদের গুনাবলিঃ
সাধারণ কাঁটাছেঁড়ায় হলুদ এন্টিসেপ্টিকের কাজ করে।
মুখে জ্বালা-পোড়া করলে গরম পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে কুলকুচি করুন।
শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
সূর্যের তাপে গা জ্বলে গেলে হলুদের পাউডারের মধ্যে বাদামের চূর্ণ এবং দই মিশিয়ে লাগান।
সর্দি-কাশি হলে হলুদ খেতে পারেন। কাশি কমাতে হলে হলুদের টুকরা মুখে রেখে চুষুন। এছাড়া এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে হলুদের গুঁড়ো এবং গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন।
আয়ুর্বেদিক মতে, হলুদ রক্ত শুদ্ধ করে।
হলুদের ফুলের পেস্ট লাগালে চর্ম রোগ দূর হয়।
এটি চেহারার সৌন্দর্য বাড়াতেও সাহায্য করে। হলুদের সঙ্গে চন্দন মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
এর মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা প্রভৃতি নানা পদার্থ রয়েছে। তাই হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা জন্মায়। লিভারের ক্ষেত্রে হলুদ খাওয়া খুবই ভালো।
হলুদের মধ্যে ফিনোলিক যৌগিক কারকিউমিন রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
হলুদ মোটা হওয়া থেকে বাঁচায়। হলুদে কারকিউমিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা শরীরে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায়। শরীরের কলাগুলোকে বাড়তে দেয় না।
গা ব্যথা হলে দুধের মধ্যে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন। জয়েন্টের ব্যথা হলে হলুদের পেস্ট তৈরি করে প্রলেপ দিতে পারেন।
যখন ফুলকপির সাথে হলুদ মিশিয়ে খাওয়া হয় তখন তা গ্লান্ড ব্লাডারে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ব্রেস্ট ক্যন্সার লাংস পর্যন্ত যাতে ছড়াতে না পারে তা প্রতিরোধ করে হলুদ।
এটা শৈশবে লিউকমিয়ার ঝুঁকি কমায়।
চাইনিজরা বিষণ্ণতা কমাতে অনেক আগে থেকেই হলুদের ভেষজ চিকিৎসা করে আসছে।
ক্ষতিগ্রস্থ ত্বক বা যাদের ত্বকে অ্যালার্জির প্রকোপ বেশি তা কমাতে এবং নতুন কোষ গঠনেও হলুদ উপকারী।
লিভার ড্যামেজ যা একসময় সিরোসিসে রূপ নেয় তা প্রতিরোধে হলুদের উপকার অনস্বীকার্য।
রিসার্চে প্রমাণিত হয়েছে, হলুদের মাধ্যমে পুর্ব চিকিৎসা নেয়া হলে তা ক্যান্সার সেল কে দুর্বল করে দেয় এবং এতে করে ক্যন্সার সহজে ছড়াতে পারেনা।
এছাড়া … হলুদ ফেস প্যাক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। আপনি চাইলে কাঁচা হলদু বেটে অথবা পাউডার হলুদ মিক্স করেও ফেস প্যাক বানাতে পারেন।
-প্রথমে ২ চামচ ময়দার সাথে দই ও অল্প একটু হলুদ ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে লাগান। যখন দেখবেন শুকিয়ে আসছে তখন মুখের চারপাশে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে স্ক্রাব করুন। হলুদ আপনার ত্বকের ব্রণ নিরসনে সাহায্য করবে যা তৈলাক্ত ত্বকে হওয়ার প্রধান কারন। যখন আপনি এই মিক্সটিকে স্ক্রাবারের মতো ব্যবহার করবেন এটা আপনার ত্বকের মৃত কোষকে দূর করতেও সাহায্য করবে।
-আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয় তাহলে আপনি ডিমের সাদা অংশের সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রস , গোলাপ জল ও একটু অলিভ অয়েল এবং এর সাথে এক চিমটি হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। তারপর আপনি প্যাকটি মুখে লাগান, আপনার কনুই বা গোড়ালিও যদি শুস্ক হয় তাহলে সেখানেও এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহারের পর এটি পুরোপুরি শুকাতে দিন এবং শুকানোর পর কসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার ত্বকের আর্দ্রতা বাড়াবে।
সূত্র : ইন্টারনেট