করলার পুষ্টিগুণ
ঋতু পরিবর্তন, অতিরিক্ত গরমে করলার তেঁতো সবজি খাদ্য তালিকায় রাখুন। এটা সহজলভ্য সবজি। সারা বছরই কমবেশি পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণের দিক থেকে করলা যথেষ্ট মানসম্মত।
১০০ গ্রাম করলায় ২৮ ক্যালরি, ক্যালসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-এ ১৪৫০ মাইক্রো গ্রাম, ভিটামিন সি-৬৮ মিলিগ্রাম, শর্করা ৪.৩ গ্রাম থাকে।
কারণ করলা কৃমির জন্য উপকারী। রক্তে শর্করা কমানোর জন্য অনেক কার্যকর। তবে করলার কোন্ অংশ রক্তের শর্করা কমায়।প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে।এতে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। ভিটামিন-সি ত্বক ও চুল ভালো রাখার জন্য একান্ত প্রয়োজন। ভিটামিন-সি প্রোটিন ও আয়রন শোষণে সাহায্য করে। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের ক্ষমতা গড়ে তোলে। ডায়েটারিফাইবার-সমৃদ্ধ করলা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়।নানা ধরনের চর্মরোগ ও ক্ষত প্রতিরোধে সাহায্য করে। সবজি হিসাবে করলা তেতো হলেও এর রয়েছে যথেষ্ট ভেষজ এবং পুষ্টিগুণ। কিউকার বিটাসিন নামক একটি দ্রব্যের উপস্থিতির জন্য এর স্বাদ তিতা হয়। এটি দু’ধরনের ছোট, প্রায় গোলাকার আকৃতির নাম করলা, অপেক্ষাকৃত বড় লম্বাটে হলে উচ্ছে। দুটোর গুণাগুণ সমান। ভেষজ বিদদের মতে করলায় রয়েছে রোগ প্রতিরোধ এবং রোগ নিরাময়ের অসাধারণ ক্ষমতা। এলার্জি প্রতিরোধে নিয়মিত উচ্ছের রস উপকার পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করলা উত্তম। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে করলার রস খেলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাতের ব্যাথায় নিয়মিত করলা রস খেলে ব্যথা আরোগ্য হয়। আর্য়ুবেদের মতে করলা কৃমিনাশক, কফনাশক ও পিত্তনাশক। করলার জীবানু নাশক ক্ষমতাও রয়েছে। ক্ষতস্থানের ওপর উচ্ছে পাতার রসের প্রলেপ দিলে এবং উচ্ছে গাছ সেদ্ধ পানি দিয়ে ক্ষত ধুয়ে দিলে কয়েকদিনের মধ্যেই ক্ষত শুকিয়ে যাবে। চর্মরোগেও করলা উপকারী। জন্ডিস ও লিভারের অসুখে খাবারে অরুচি দেখা দিলে করলা খেলে রুচি বর্ধক হয়। করলা জন্মায় ট্রপিক্যাল দেশগুলিতে। যেমন- এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপপূঞ্জ, দক্ষিণ আমেরিকা। করলা স্বাদে তিতা, তবে উপকারী অ-নে-ক। এশিয়া অঞ্চলে হাজার বছর ধরে এটি ওষুধ হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান অঞ্চলের আদিবাসীরাও বহু বছর ধরেই করলাকে ডায়াবেটিস, পেটের গ্যাস, হাম ও হেপাটাইটিসের ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। ব্যবহার করে আসছে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, ম্যালেরিয়া জ্বরে এবং মাথা ব্যথায়ও।
করলায় আছে পালং শাকের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালশিয়াম আর কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম। আছে যথেষ্ট লৌহ, প্রচুর ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং আঁশ। ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি এন্টি অক্সিডেন্ট; বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখে, শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে। আছে লুটিন আর লাইকোপিন। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লাইকোপিন শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট।
করলা অন্ত্রনালী কর্তৃক গ্লুকোজ শোষণ কমায়। রক্তের সুগার কমাতে করলা ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকর। অনেক গবেষণাই করলাকে ডায়াবেটিস চিকিত্সায় কার্যকর প্রমাণ করেছে। ফিলিপাইনে ডায়াবেটিস চিকিত্সায় ভেষজ ওষুধ হিসাবে করলা অনুমোদিত। করলায় কমপক্ষে তিনটি উপাদান আছে যেগুলো রক্তের সুগার কমিয়ে ডায়াবেটিসে উপকার করে। এগুলো হচ্ছে চ্যারান্টিন, ইনসুলিনের মত পেপটাইড এবং এলকালয়েড। তিতা করলা অগ্নাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষ ‘বিটা সেল’- এর সংখ্যা বৃদ্ধি করে। তাই করলা অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ করায় বলে ধারণা করা হয়।
করলা ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমায়। করলা এডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ নামক এনজাইম বা আমিষ বৃদ্ধি করে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোর সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শরীরের কোষের ভিতর গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়াও বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের সুগার কমে যায়।
তিতা করলার নির্যাস বা রস যা-ই বলুন, আমেরিকাসহ অনেক উন্নত দেশের হেলথ ফুড স্টোরে সাজানো থাকে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায়, লোকজ চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহূত হয়। রক্তের সুগার কমানোর গুণ আছে করলার, এমন তথ্য রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখেছেন, তিতা করলা রসের রয়েছে আরও হিতকরী গুণ, এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘ক্যানসার রিসার্চ’ জার্নালের এ বছরের পয়লা মার্চ ইস্যুতে।
আমেরিকার সেন্টলুই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজির অধ্যাপক ও মুখ্য গবেষক রত্না রায় বলেন, তিতা করলার নির্যাস নিয়ে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা গেল, স্তন ক্যানসার নাশের ক্ষমতা এর রয়েছে। আর এর প্রয়োগে স্বাভাবিক কোষ অবশ্য বিনষ্ট হয়নি। তবে গবেষণাগারে পেট্রিডিশে যে পরীক্ষার ফলাফল তাতে দেখা গেছে, তা মানবেতর প্রাণীতে পরীক্ষা করে এবং পরে মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন হবে। তা না হলে তিতকরলার রস খেলে ক্যানসার সুরক্ষা বা প্রতিরোধ হবে সে সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত দেওয়া কঠিন হবে।
রত্না রায় বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি না যে তিতকরলার রস ক্যানসার নিরাময় করে, তবে ক্যানসার হলে এর অগ্রগতি শ্লথ করে দিতে পারে, কিছুটা সুরক্ষা ক্ষমতাও এর থাকতে পারে।’
তিতকরলার রসে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ ও ফ্লাভোনয়েডস। স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে পটাশিয়াম বেশি থাকে বলে যাদের রক্তে পটাশিয়াম বেশি তারা করলা খাবেন না।আঁশযুক্ত সবজি বলে ডায়রিয়ার সময় খাবেন না।তিতা স্বাদের জন্য খুব বেশি খেলে লিভারের ক্ষতি করে। গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে বেশি না খাওয়াই ভালো, কারণ বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
সূত্রঃ ইন্টারনেট