আজ শনিবার , ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং  , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঃ , ৭ রজব ১৪৪৫ হিঃ

ধনেপাতার ভেষজগুণ

ধনেপাতা আমাদের দেশে ভীষণ পরিচিত। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ধনেপাতা পাওয়া যায়। আমাদের দৈনন্দিন খাবারের অন্যতম অনুষঙ্গ ধনেপাতা। সব ধরনের তরকারিকে সুস্বাদু করে তোলার ক্ষেত্রে এর রয়েছে দারুণ ভূমিকা। ধনেপাতা শুধু রান্নার উপকরণ নয়, এর রয়েছে নানাবিধ ঔষধি গুণ। তাই এই পাতাকে বলা হয় হার্বাল প্যান্ট বা ঔষধি পাতা। ধনেপাতার ইংরেজি নাম হরো মিলানট্রো। চলুন জেনে নিই ধনেপাতার ভেষজ গুণগুলো কি কি :

  • ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’ , ফলিক এসিড  যা ত্বকের উপকারের জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিনগুলো প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, ত্বক, চুলের ক্ষয়রোধ করে, মুখের ভেতরের নরম অংশগুলোকে রক্ষা করে। মুখগহ্বরের ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
  • ধনেপাতার ভিটামিন ‘এ’ চোখের পুষ্টি জোগায়, রাতকানা রোগ দূর করতে ভূমিকা রাখে।
  • আমেরিকার সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, ধনেপাতায় এমন একটি উপাদান আছে যা কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সহায়তা করে। দিনের বেশিরভাগ সময় যারা কম্পিউটারের পর্দায় চোখ রাখে, তাদের জন্য ধনেপাতার রস খুবই উপকারী।
  • কোলেস্টেরলমুক্ত ধনেপাতা দেহের চর্বির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আমাদের শরীরে এলডিএল নামে এক ধরনের খারাপ কোলেস্টেরল রয়েছে, যা শরীরের শিরা-উপশিরার দেয়ালে জমে হূৎপিণ্ডে রক্ত চলতে বাধা দেয়। পরিণামে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। ধনেপাতা এই খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে দেয়। আর শরীরের জন্য উপকারী এক ধরনের কোলেস্টেরল, যার নাম এইচডিএল, মাত্রা বৃদ্ধি করে। ধনেপাতা শরীরের এইচডিএলকে বাড়িয়ে এলডিএলকে কমিয়ে দেয়।
  • ধনেপাতায় উপস্থিত আয়রন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতেও অবদান রাখে।
  • এ ছাড়া ভিটামিন ‘কে’-তে ভরপুর ধনেপাতা হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে শরীরকে করে শক্ত-সমর্থ। তারুণ্য ধরে রাখতেও এর অবদান অপরিসীম। তবে ধনেপাতা রান্নার চেয়ে কাঁচা খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়।
  • ধনেপাতা শীতকালীন ঠোঁট ফাটা, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব দূর করতে রাখে যথেষ্ট অবদান।
  • ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’থাকায় দেহের কাটাছেঁড়া অংশগুলো শুকানোর জন্য ভীষণ জরুরি।
  • আয়ুবের্দিক চিকিৎসক হাইতালকুমার দোশালি জানিয়েছেন, ডায়াবেটিক রোগীর জন্য এটা খুবই উপকারী। অ্যান্টিডায়াবেটিক হিসেবে কাজ করে। সুগার নিয়ন্ত্রণ করে।
  • সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিচার্স ইন আয়ুর্বেদ অ্যান্ড সিদ্ধার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দৃষ্টি শক্তির অস্বচ্ছতা দুর করতে, শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ধনেপাতার রস উপকারী। ২-৩ টেবিল চামচ রসের সঙ্গে ১-২ চা-চামচ মধু মিশিয়ে ১ বার করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। যাদের শরীরে ভিটামিন এ, বি ওয়ান, বি-টু, সি এবং আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তাদের ১ চা-চামচ ধনেপাতার রস এবং সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে দারুন কাজে দেয়।
  • হজমের সমস্যা, পেট ফোলাফাঁপার পাশাপাশি পেটে ব্যথা করে। যাদের বমি বমি ভাব হয়, বমি হয়, তাদের জন্যও ১/২ চামচ ধনেপাতার রস বেশ ভালো। মাইগ্রেনে এবং অন্যান্য মাথা ব্যাথায় কপালে ধনেপাতার রসের প্রলেপ দিলে আরাম পাওয়া যায়।
  • জন্ডিসে মাথা ব্যাথা করা, আমাশয়ের সময় মুখ তেতো ভাব হলে, মুখে বেশি লালা ঝরলে, হেঁচকি কাটাতেও ধনেপাতার রস উপকারী।
  • ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, খিদে বাড়িয়ে দেয়। ধনেপাতা চিবানোর পর সেই থেঁতলে যাওয়া পাতার রস দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ি মজবুত হয়, রক্ত পড়া কমে, মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। উল্লেখ্য, গ্যাসট্রিকের সমস্যা থাকলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। সারা পৃথিবীতে, বিশেষত এশিয়া মহাদেশে ধনের গুঁড়াকে তরকারিতে মসলা হিসেবে খাওয়া হয়। গোটা ধনেকেও চিবিয়ে খাওয়া যায়। রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া কিছু সুগন্ধি তৈরির জন্য ধনেপাতা ব্যবহার করা হয়।

 

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি কথা হলো এই সুপরিচিত খাবারটির অনেক ঔষধি গুণাগুণের পাশাপাশি অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বিদ্যমান যা আমাদের শরীরকে দিনদিন অসুস্থ করে তুলতে পারে। আসুন দেখি ধনেপাতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসমুহঃ-
১. লিভারের ক্ষতিসাধন : অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে এটি লিভারের কার্যক্ষমতাকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এতে থাকা এক ধরনের উদ্ভিজ তেল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে ফেলে। এছাড়া এটাতে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যেটা সাধারণত লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে কিন্তু দেহের মাঝে এর অতিরিক্ত মাত্রার উপস্থিতি লিভারের ক্ষতিসাধন করে।
২. নিম্ন রক্তচাপ : অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার ফলে দেহের হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্য নষ্ট করে ফেলে, যার ফলে নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই ধনেপাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে নিম্ন রক্তচাপের উদ্ভব ঘটতে পারে। এছাড়া এটি হালকা মাথাব্যথারও উদ্রেক করতে পারে।
৩. পেট খারাপ : স্বাভাবিকভাবে ধনেপাতা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল বিষয়ক সমস্যা দূর করে থাকে কিন্তু বেশি পরিমাণে ধনেপাতা সেবন পাকস্থলীতে হজমক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি করে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এক সপ্তাহে ২০০ এমএল ধনেপাতা আহারে গ্যাসের ব্যথা ওঠা, পেটে ব্যথা, পেট ফুলে ওঠা, বমি হওয়া এমনকি পাতলা পায়খানা হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা যায়।
৪. ডায়রিয়া : ধনেপাতা অল্প খেলে পেটের সমস্যা দূর হয় কিন্তু এটি বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এছাড়া এর ফলে ডিহাইড্রেশন হতে থাকে। ফলে ডায়রিয়ার সমস্যাটি হতেই থাকে। তাই এই ধরনের সমস্যা এড়াতে প্রতিদিনের খাবারে ধনেপাতা কম পরিমাণে ব্যবহার করুন।
৫. নিঃশ্বাসের সমস্যা : আপনি যদি শ্বাসকষ্টের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে এই ধনেপাতা আহার থেকে বিরত থাকুন। কেননা এটি আপনার শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা করে থাকে যার ফলে ফুসফুসে অ্যাজমার সমস্যা হতে পারে। এই ধনেপাতা খেলে মাঝে মাঝে ছোট ছোট নিশ্বাস নিতেও সমস্যা তৈরি হয়।
৬. বুকে ব্যথা : অতিরিক্ত ধনেপাতা আহারে বুকে ব্যথার মত জটিল সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এটা শুধুমাত্র অস্বস্তিকর ব্যথাই সৃষ্টি করে না তা দীর্ঘস্থায়ীও হয়ে থাকে। এজন্য এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে দৈনন্দিন আহারে কম করে এই ধনেপাতা খেতে পারেন।
৭. ত্বকের সংবেদনশীলতা : সবুজ ধনেপাতাতে মোটামুটিভাবে কিছু ঔষধি অ্যাসিডিক উপাদান থাকে যেটি ত্বককে সূর্যরশ্মি থেকে বাঁচিয়ে সংবেদনশীল করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত সেবনে সূর্যের রশ্মি একেবারেই ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না ফলে ত্বক ভিটামিন কে থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া ধনেপাতা ত্বকের ক্যান্সার প্রবণতাও তৈরি করে থাকে।
৮. অ্যালার্জীর সমস্যা : ধনেপাতার প্রোটিন উপাদানটি শরীরে আইজিই নামক অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানকে সমানভাবে বহন করে থাকে। কিন্তু এর অতিরিক্ত মাত্রা উপাদানগুলোর ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। ফলে অ্যালার্জীর তৈরি হয়। এই অ্যালার্জীর ফলে দেহে চুলকানি, ফুলে যাওয়া, জ্বালাপোড়া করা, র‌্যাশ ওঠা এই ধরনের নানা সমস্যা হয়ে থাকে।
৯. প্রদাহ : অতিরিক্ত ধনেপাতা সেবনের আরেকটি বিশেষ পার্শ্ব প্রতক্রিয়া হল মুখে প্রদাহ হওয়া। এই ঔষধিটির বিভিন্ন এসিডিক উপাদান যেটি আমাদের ত্বককে সংবেদনশীল করে থাকে পাশাপাশি এটি মুখে প্রদাহেরও সৃষ্টি করে। বিশেষ করে এর ফলে ঠোঁট, মাড়ি এবং গলা ব্যথা হয়ে থাকে। এর ফলে সারা মুখ লাল হয়েও যায়।
১০. ভ্রূণের ক্ষতি : গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া ভ্রূণের বা বাচ্চার শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। ধনেপাতাতে থাকা কিছু উপাদান মহিলাদের প্রজনন গ্রন্থির কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে ফেলে যার ফলে মহিলাদের বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা লোপ পায় এবং বাচ্চা ধারণ করলেও গর্ভকালীন ভ্রূণের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।

 

ধনেপাতার বহুবিধ ব্যবহারের জন্যই সবার উচিত প্রতিদিনের খাবারের মেন্যুতে ধনেপাতাকে স্থান দেওয়া। তবে অধিক পুষ্টির আশায় মাত্রাতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া উচিৎ নয়।

 

 

 

সূত্র: ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহিত

 

বিভাগঃ স্বাস্থ্য সেবা । এই পোষ্টটি ২৩৭১ বার পড়া হয়েছে
কোন মন্তব্য নেই

আপনার মন্তব্য লিখুন

এই পোষ্টে মন্তব্য করতে অবশ্যই » লগইন করতে হবে ।
  • নামাজের সময়সূচী

    মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১
    ওয়াক্ত শুরু জামাত
    ফজর ০৪.৪২ ০৫.১৫
    জোহর ১১.৪৪ ০১.১৫
    আসর ০৩.৫৩ ০৪.৩০
    মাগরিব ০৫.৩০ ০৫.৩৫
    এশা ০৬.৪৫ ০৭.১৫
    সূর্যোদয় : ০৫.৫৭ মিঃ
    সূর্যাস্ত : ০৫.২৯ মিঃ
  • Ads

  • অন্যান্য পাতাসমুহ



    Add Address

  • ভিজিটর তথ্য

    আপনার আইপি
    3.145.178.240
    আপনার অপারেটিং সিস্টেম
    Unknown
    আপনার ব্রাউজার
    " অপরিচিত "
  • ভিজিটর কাউন্টার


    free hit counter