আসুন বানিয়ে ফেলি আপনার মোবাইলের জন্য একটা ট্রাভেলার মোবাইল চার্জার (পাওয়ার ব্যাংক) – Make a Portable Mobile Charger at Home (Power Bank)

আসসালামু আলাইকুম । সবাই কেমন আছেন ? আশা করি ভাল আছেন । আমিও আল্লাহর রহমতে ভাল আছি ।
বর্তমানে প্রায় সবার হাতে হাতে মোবাইল ! কোনটার দাম একটু বেশি আবার কোনটার দাম একটু কম ! তবে মোবাইল যেরকম দামেরই হোক না কেন , চার্জ না থাকলে মোবাইল বন্ধ হয়ে যায় এই কথা আমরা সবাই জানি ! তবে চার্জ ফুরিয়ে গেলে আমরা চার্জ দিতে পারি ! কিন্তু ভাবুন তো যখন আপনি কোথাও দুই থেকে তিন দিনের জন্য ভ্রমন করতে যান তখন যদি চার্জ ফুরিয়ে যায় তখন কি করবেন ? অথবা কোন কারনে আপনার বাসায় বিদ্যুতের লাইনে কোন সমস্যা বা লোড শেডিং এর কারনে বিদ্যুৎ নেই ঠিক সেই সয়মটায় মোবাইলের ব্যাটারী লো সিগনাল দিচ্ছে। ধরুন আপনি কোথাও পিকনিক করতে গেছেন , সেখানে যদি চার্জ ফুরিয়ে যায় তখন কি করবেন ? ওই সময় হয়তো আপনার ফোনে অনেক জরুরী কল আসতো কিন্তু কিছুই করার ছিল না ! তবে এখন থেকে অনেক কিছুই করার আছে ! এসব সমস্যার একটাই সমাধান একটা পাওয়ার ব্যাংক বা পোর্টেবল চার্জার যেটা দিয়ে আপনি যেকোন সময় চার্জ করতে পারবেন । বাজারে এখন অনেক ডিজাইনের বিভিন্ন মিলি অ্যাম্পিয়ার এর পাওয়ারের পাওয়ার ব্যাংক কিনতে পাওয়া যায় । অ্যাম্পিয়ার যত বেশী হবে তত দামও বেশী হবে ।
৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামের পাওয়ার ব্যাংক পাবেন । কিনতে পাবেন বিভিন্ন মোবাইল মার্কেটে বা কম্পিউটার মার্কেটে । পাওয়ার ব্যাংকগুলোতে দুই ধরনের ব্যাটারী ব্যবহার করা হয় । ১. লিথিয়াম আয়ন ২. পলিমার । আমার জানা মতে লিথিয়াম আয়ন থেকে পলিমার ব্যাটারীগুলো অনেক বেশী ক্ষমতা সম্পন্ন । তাই যদি পাওয়ার ব্যাংক কিনেন পারলে পলিমার ব্যাটারীর পাওয়ার ব্যাংক কিনুন । অনেক ভাল সার্ভিস পাবেন । বিভিন্ন ডিজানের পাওয়ার দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।
আমাদের আজকের পোষ্ট কিভাবে আমরা ঘরে বসে একটা পাওয়ার ব্যাংক নিজেই তৈরি করতে পারব । যাদের ইলেকট্রনিকস কাজের কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে তারা আমার নিচের নিয়ম অনুসরন করে নিজেই তৈরি করে ফেলুন পোর্টেবল মোবাইল চার্জার ।
আমি আপনাদের এই পদ্ধতিটাকে দুটি স্তরে শিখাব ।
প্রথম স্তরঃ এখানে আমরা একদম সহজ পদ্ধতিতে মাত্র চারটা পার্স ব্যবহার করে তৈরি করব ।
যে চারটা জিনিস লাগবে তা হলঃ
১. ৩ পা ওয়ালা একটি ভোল্টেজ রেগুলেটর আইসি
২. একটি ৯ ভোল্ট ব্যাটারী
৩. আপনার মোবাইল অনুযায়ী চার্জার পিন ।
৪. প্রয়োজন অনুযায়ী ইলেকট্রিক তার ।
আপনার যদি জিনিস গুলো সংগ্রহ হয়ে থাকে তাহলে শুরু করে দিন।
১. আগে আপনার ভোল্টেজ রেগুলেটর এর তিনটি পা কোনটা কি তা জানতে হবে । প্রথমে ভোল্টেজ রেগুলেটর আইসি হাতে নিন এবং লেখা অংশ আপনার নিজের দিকে ধরুন । তাহলে প্রথম যে পা দেখবেন তা হল ইনপুট পজেটিভ পা । আর মধ্যের যে পা দেখবেন তা ইনপুট এবং আউটপুট এর নেগেটিভ পা । সবশেষে যে পা আছে তা হল আপনার আউটপুট পজেটিভ পা ।
নিচের চিত্রটি লক্ষ করুন
এখন আমাদের আসল কাজ । আপনার ব্যাটারীর ক্যাপটি হাতে নিন দেখুন এতে একটা লাল এবং একটা কালো তার আছে । লাল তারটি পিন১ পা তে সোল্ডার করে লাগিয়ে দিন । মোবাইলের চার্জার পিনটি হাতে নিন এবং দেখুন এতেও দুটি লাল কালো তার আছে । এবার ব্যাটারীর ক্যাপ এর কালো তারটি এবং মোবাইল চার্জার পিনের কালো তারটি একসাথে জোড়া দিন এবং পিন২ পা তে আটকিয়ে দিন । এবার বাকি আছে চার্জার পিনের লাল তারটি এটিকে পিন৩ তে আটকিয়ে দিন । সোল্ডার গুলো খুব সতর্ক অবস্থায় জোড়া দিন যাতে একটির সাথে আর একটি কোনভাবে লেগে না থাকে ।
এবার আপনার ব্যাটারির ক্যাপটি ব্যাটারীতে যেভাবে বসালে বসে সেভাবে চাপ দিয়ে বসিয়ে দিন । উলটাপাল্টা যাতে না লাগে খেয়াল করুন ।
ব্যস আপনার মোবাইল চার্জার রেডি । এবার চার্জিং পিনটি মোবাইলে লাগিয়ে দিন আর দেখুন চার্জ হচ্ছে ।
দ্বিতীয় স্তরঃ এখানে আমরা উপরের কাজটিকে আরেকটু মান সম্পন্ন করব । তার জন্য আমাদের কয়েকটা কাজ বেশী করতে হবে ।
দ্বিতীয় স্তরে অতিরিক্ত যা যা লাগবেঃ
১. যে কোন কালারের ছোট LED লাইট ১টি
২. 1k resistor (brown black red) ১টি
৪. একটি হিটসিন্ক । আইটি গরম হয়ে যায় বলে এটি ব্যবহার করা ভাল ।
৫. একটি সার্কিট বোর্ড সেখানে সবগুলো পারস বসানো হবে ।
আরো অনেক জিনিস লাগানো যায় আপনি যদি সুন্দর করে সাজিয়ে বানাতে চান। যেমন একটা ইউএসবি ইনপুট পোর্ট সেখানে যেকোন ইউএসবি ক্যাবল লাগিয়ে মোবাইল এ চার্জ দিতে পারবেন । আবার আপনার চার্জারটি যদি রিচার্জেবল ব্যাটারী দিয়ে ব্যবহার করেন তাহলে ব্যাটারিটা কিছুদিন পর চার্জ দিতে হবে তার জন্য এই সার্কিট এ একটা ইনপুট চার্জার জেক লাগাতে পারেন যার দ্বারা এর ভিতরের ব্যাটারিটা চার্জ হবে । আবার একটা সুইচ লাগাতে পারেন এটি অন অফ করার জন্য যাতে ব্যাটারি খুলে অফ না করতে হয় । আবার পুরো সার্কিটটি একটি সুন্দর পাস্টিক বক্সে রাখার জন্য একটা পাস্টিক বক্স ব্যবহার করতে পারেন ।
অনেক হল আসুন এবার মুল কাজে আসি ।
সবগুলো জিনিস সংগ্রহ করা হলে কাজ শুরু করে দিন । আগের কাজটি যতটুকু করেছেন ঐটুকু হাতে নিন আর এতেই বাকি পারস গুলো সংযোগ দিব ।
আগের কাজটি নিচের ছবির মত হওয়ার কথাঃ
প্রথমে আমরা দুটি ক্যাপাসিটর সংযুক্ত করব । একটি ব্যাটারির ইনপুট লাইন দুইটার মাঝখানে । আরেকটি মোবাইলের পিনের যে দুটি লাইন আছে তার মাঝখানে । নিচের ছবির মত
এবার এলইডি বাল্ব লাগাব । বাল্ব এর সাথে রেজিষ্টরটি নিচের ছবির মত সংযোগ দিন ।
এলইডি বাল্ব এর যে পা টি লম্বা সেটি পজেটিভ আর যেটি খাটো সেটি নেগেটিভ । আর রেজিষ্টরটির brown কালারের দিকটা পজেটিভ আর অন্যদিকটা নেগেটিভ । এবার রেজিষ্টারের নেগেটিভ পা যোগ করুন এলইডির পজেটিভ পায়ে । তাহলে বাকি থাকল রেজিষ্টারের পজেটিভ পা আর এলইডির নেগেটিভ পা ।
এবার এই দুটিকে যুক্ত করুন সার্কিট এর আউটপুট নেগেটিভ কালো তার এ আর পজেটিভ লাল তার এ ।
যদি সুইচ দিতে চান তাহলে দিন ব্যাটারির পজেটিভ তারের মাঝখানে । এবার পুরো কাজটি একটি সার্কিট বোর্ড এ সাজিয়ে বসিয়ে দিন । ব্যস কাজ শেষ ।
নিচের ছবির মত হবে
এই সার্কিট এর আইসি রেজিষ্টর ক্যাপাসিটর ব্যাটারি পিন সবগুলো পণ্য খুচরা পাবেন গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেটে ।
এই সার্কিট এ ব্যবহার করা ৭৮০৫ আইসির কাজ ইনপুট ভোল্টকে কমিয়ে মোবাইলের উপযোগি ৫ ভোল্ট করে সাপ্লাই দেওয়া ।
78xx এই সিরিজে আরো বিভিন্ন ভোল্টের আইসি আছে ।
একেকটা একেক রকম ভোল্ট সাপ্লাই দেয় । নিচে এই আইসিগুলো একটা চার্ট দেওয়া হলঃ
আমার উপরের পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করতে আমাকে এই টিউটোরিয়ালগুলো সাহায্য করেছে ।
লিংক ১ লিংক ২
ভিডিও টিউটোরিয়াল
এই বিষয়ে আরো জ্ঞান নিতে গুগলে এবং ইউটিউবে সার্চ দিন দেখবেন অনেক টিউটোরিয়াল পাবেন ।
উপরের এই কাজটি অনেকে অনেকভাবেই করতে পারে । আমি এটিকে এভাবে করেছি ।
যারা ইলেক্ট্রনিক বিষয়ে পারদর্শি আশা করি আপনারা আমার এই পোষ্টটে কোন ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন । আর এতে কোন ভুল তথ্য থাকলে দয়া করে আমাকে ধরিয়ে দিবেন আমি পোষ্টে সংশোধন করে দিব । এতে অনেকের উপকার হবে । আমি এসব বিষয়ে পারদর্শি না । বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে এই কাজটি বাসায় করেছি । যখন সাকসেস হয়েছি তারপর পোষ্ট দিতে বসলাম ।
বিঃদ্রঃ যারা এই নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবেন তারা নিজ দায়িত্বে কাজ করবেন । আর ফাইনাল আউটপুট দেখতে নরমাল কোন ডিভাইস ব্যবহার করুন । যদি কোন দামি মোবাইলে চেক করতে লাইন লাগিয়ে দেন আর কোন সমস্যা হয় আমাকে কিছুই বলতে পারবেন না । কাজে কোন ভুল হলে সার্কিটটি কাজ নাও করতে পারে বা সমস্যা করতে পারে । তাই চার্জ হয় কিনা প্রথমে কমদামি কোন ডিভাইসে লাগিয়ে দেখুন যদি ঠিক থাকে তারপর অন্য দামি ডিভাইসে ব্যবহার করতে পারেন । যা করবেন খুব সতর্ক হয়ে এবং সাবধানতার সহিত ।
আজ এ পর্যন্তই । সবাই ভাল থাকবেন । আর আমার পোষ্ট ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক দিবেন । আর নতুন নতুন পোষ্ট পেতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন ।
কারো কোন সমস্যায় আমাকে পাবেন ফেইসবুকে
আর আমাদের ফেইসবুক ফ্যান পেইজে লাইক না দিয়ে থাকলে আজই একটা লাইক দিয়ে দিন আর আপডেট থাকুন আমাদের সাথে ।
আল্লাহ হাফেজ ।